অতিথি প্রতিবেদক:: মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনী মেলা জমে উঠেছে। নগরীর শাহী ঈদগাহ সদর উপজেলা মাঠে এ মেলা চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরিধান করেই মেলায় প্রবেশ করছে সবাই। মেলায় দেশি-বিদেশি দেড়শতাধিক স্টল-প্যাভিলিয়ন বসেছে। রয়েছে শিশুদের খেলাধুলার জন্য শিশুপার্ক। আছে গেম অব ডেঞ্জার থেকে শুরু করে ভুতের বাড়িও। সব মিলিয়ে ছুটির দিনে পরিবারের সদস্যদের অবসর সময় কাটাতে কিংবা কেনাকাটা করার পাশাপাশি ঘুরে আসতে পারেন পণ্য প্রদর্শনী মেলায়।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মেলার প্রবেশ পথেই রয়েছে মানবদেহের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা। আছে স্বস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর আরও নানা পদক্ষেপ। মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। করোনা মহামারিকালে ঝুঁকি এড়ানোর যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েই শুরু হয়েছে সিলেট উইমেন চেম্বারের উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যপ্রদর্শনী ও মেলা। রোববার মেলাটি গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিলেট সদর উপজেলার শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠে চলছে এ মেলা। মেলায় বসেছে দেশী-বিদেশী নানা পণ্যের স্টল।
মেলার শুরুর দিন থেকেই দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটার পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখছেন অনেকে। মেলায় সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়ছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মেলা অফিসের পাশেই দৃষ্টিনন্দন এ কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ বিভিন্ন আলোকচিত্র এবং তার লেখা বই প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে বড় পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণও বাজছে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সকাল ১০টা থেকে মেলা শুরু হলেও মোটামুটিু ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা যায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পণ্য নিয়ে স্টল বসেছে প্রায় শ’খানেক। প্রায় সবগুলোই নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি বা স্টলগুলোর মালিকানা শতভাগ নারীদের। সেই নারীরা যেমন আছেন সিলেটের, তেমনি আছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেরও।
ঢাকা বরিশাল খুলনা রাজশাহী নিলফামারি ও ময়মনসিংহের উমেন্স চেম্বারের নারী উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আছেন ব্যক্তিগত পর্যায়ের উদ্যোক্তারাও। পণ্যের মধ্যে আছে বাঁশ-বেতের সামগ্রী থেকে আছে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত শিল্প, জুতো, চাদর, গৃহস্থালি সামগ্রী, বিছানার চাদর, দরজা জানালার পর্দা, ফুলদানি থেকে এমন কিছু নাই যা এই মেলায় পাওয়া যাচ্ছেনা। তাছাড়া বাচ্চাদের সময় কাটানোর মতো উত্তম ব্যবস্থাও আছে। আছে বিভিন্ন ধরণের রাইড। খেলধুলার ব্যবস্থাও রয়েছে। মোবাইলে তারা যেসব গেইম আঙুলে টিপে খেলে সেই মোটরসাইলেকল রেইস বা কার রেইস এখানে সরাসরিই খেলতে পারে। এর আগে সিলেটের কোন আয়োজনে এসব ছিলনা। উদ্যোক্তারা জানালেন সিলেটের জন্য এগুলো একেবারে নতুন সংযোজন। আছে চিলড্রেন কিংডম, মিনিপার্কে নৌকা চালানোর ব্যবস্থাও। এতে প্রতিদিনই শিশু বা কিশোর কিশোরীদের ভিড় বাড়ছেই। দোলনা নাগরদোলা ¯িøাপারতো আছেই। আছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের পিঠার স্টলও।
প্রায় প্রতিটি পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে, অত্যন্ত সুলভে। রোববার বিকেলে সুরভি নামক এক গৃহিনীকে প্রচুর কেনাকাটা সেরে বেরিয়ে আসতে দেখা গেলো মেলার মাঠ থেকে। জানালেন, প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে। আর তাই তিনি কিছুটা বাড়িয়েই কেনাকাটা করেছেন পরিবারের সবার জন্য। আরও কেনার ইচ্ছে আছে- বলে হাসতে হাসতে উঠলেন একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশায়।
তাছাড়া মেলার মাঠে নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও আছে। মেলায় সার্বিক নিরপাত্তা নিশ্চিতের জন্য আছে একটা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। এছাড়াও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে নিয়োগ করা হয়েছে ৫০/৬০ জনের একটা স্বেচ্ছাসেবক দল। যাদের কাজ হচ্ছে মেলায় ঘুরে ঘুরে দর্শনার্থীদের মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে একটা প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানীও দায়িত্ব পালন করছে।
একাধিক স্টল মালিক জানালেন, মেলার প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবসা যা হচ্ছে এতে তারা সন্তুষ্ট। ‘আরওতো সময় আছে। আশা করছি ভালোই হবে- ইনশাল্লাহ।’
উল্লেখ্য, সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনী মেলা গত সোমবার শুরু হয়। মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি।